কোন বিষয়টি জন্মদিন পালনে কিছু মানুষের জন্য সুখেরও কারণ হতে পারে বা কষ্টের কারণও হতে পারে? খরচ কমাতেও পারে বা বাড়াতেও পারে?- একটু ধাঁধার মতো শোনালেও এমন একটি ব্যাপার কিন্তু রয়েছে যাকে আমরা অধিবর্ষ বা লিপইয়ার (Leap year) নামে চিনে থাকি! এই লিপইয়ার এর কারণে অনেকে চার বছরে একবার জন্মদিন পালন করাওতে পারার দুঃখ পান, আবার কেউ জন্মদিনের পার্টি প্রতিবছর দিতে গিয়ে টাকা খরচের হাত থেকেও রেহাই পান!!!
অধিবর্ষ বা লিপইয়ারের কথা বলছিলাম। ইংরেজি ক্যালেন্ডার যাকে আমরা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার বলে থাকি, সেই ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছরেই একবার করে ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের পরিবর্তে ২৯ দিনে হয়ে থাকে। কেন বা কীভাবে এই ব্যাপারগুলো হয়, তা নিয়েই একটু আলোচনা করা যেতে পারে।
লিপইয়ার বা অধিবর্ষ মূলত কী বা লিপইয়ার কাকে বলে-
অধিবর্ষ বা লিপইয়ার (Leap year) বলতে সাধারণত কোনো বছরে ৩৬৫ দিনের পরিবর্তে বাড়তি একটি দিন যোগ করে বছর হিসেব করাকে বোঝায়। প্রতিটি সৌর বছর মূলত ৩৬৫ দিনের পরিবর্তে প্রকৃতপক্ষে ৩৬৫.২৪২ দিনে সম্পূর্ণ হয়। বলা যেতে পারে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড। এই অতিরিক্ত সময়টুকুর ভারসাম্য রক্ষার্থে বাংলা, গ্রেগরিয়ান সহ বিভিন্ন ক্যালেন্ডার একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে অতিরিক্ত দিন বা মাস যোগ করে থাকে।
কে প্রথম লিপ ইয়ার চালু করেন-
জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ সালে রোমান জেনারেল জুলিয়াস সিজার (Julius Ceasea) রোমান ক্যালেন্ডারের উপর ভিত্তি করে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার তৈরি করেন। কারণ, তৎকালীন রোমান ক্যালেন্ডার ছিল ৩৫৫ দিনের। প্রশ্ন আসতে পারে- তাহলে বাকি দিনগুলোর কী হতো?- আরও জানা যায়- একই ঋতুতে বিভিন্ন উৎসব রাখার জন্যে প্রতি দুই বছরে একটি ২২ বা ২৩ দিনের মাস যোগ করা হতো। জুলিয়াস সিজারের ইচ্ছা ছিল এই নিয়মকে সহজ করার। তাই তিনি প্রতি মাসে নতুন করে দিন যোগ করে ৩৬৫ দিনের বিছির তৈরি করেন। আর যেহেতু সৌর বছর ৩৬৫ দিন থেকেও বেশি সময় লাগে, তাই তিনি প্রতি চার বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে ২৮ দিনের পর আরও একটি দিন যোগ করেন। অর্থাৎ বলা যায়, প্রতি চার বছরে অধিবর্ষ বা লিপইয়ার করেন।
এভাবে ১৬০০ বছরের বেশি চললেও একটি সমস্যা থেকে যায়। জুলিয়াস ক্যালেন্ডারে সৌর বিছর ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা ধরা হলেও আমরা জেনেছি সময়টা আরেকটু কম। প্রায় ১১ মিনিটের মতো সময় কিন্তু অতিরিক্ত ধরা হচ্ছিল প্রতি বছরে। এই যে পার্থক্যটা হচ্ছিল, এর কারণে মূল ঋতু হতে প্রতি ৪০০ বছর অন্তর জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে ৩ দিনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হতো।
প্রায় সব সমস্যার যেহেতু সমাধান আছে, এই সমস্যারও সমাধান ঘটে। ১৫৮২ সালে চালু হয় ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি (Gregory) এর নাম অনুসারে এই ক্যালেন্ডারের নাম হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। আমতা চলুন জানার চেষ্টা করি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার জুলিয়াস ক্যালেন্ডারকে কীভাবে ঠিক করে-
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে অধিবর্ষ বের করার নিয়ম-
কোনো একটি বছর অধিবর্ষ হওয়ার জন্য বছরটিকে অবশ্যই ৪ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হতে হবে।
বছরটি ৪০০ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হতে হবে।
অর্থাৎ উপরের নিয়মানুযায়ী ২০০০ সাল অধিবর্ষ হলেও ১৭০০, ১৮০০ বা ১৯০০ সাল অধিবর্ষ ছিলোনা।
যদিও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারও পুরোপুরি নিখুঁত নয়, তবে সারাবিশ্বে এখন অব্দি সমাদৃত। এতেও রয়েছে সময়ের ছোট কিছু হিসেবের পার্থক্য, যা হয়তো বা পরবর্তীতে প্রয়োজনে সংশোধনও হবে।
আমরা তো এতক্ষণ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে অধিবর্ষ বা লিপইয়ার সম্পর্কে জানলাম। প্রশ্ন আসতে পারে- আমাদের বাংলা বা আরবি ক্যালেন্ডারে কীভাবে অধিবর্ষ হিসেব করা হয়।
বাংলা ক্যালেন্ডারে প্রথমদিককার সম্রাট আকবরের ক্যালেন্ডারে অধিবর্ষের আলাদা কোনো হিসেব ছিলোনা। কিন্তু বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বাংলা ক্যালেন্ডারে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফেব্রুয়ারি মাসের সমসাময়িক মাস, বিশেষত ফাল্গুন মাসে প্রতি চার বছরে একটি দিন অতিরিক্ত যোগ করা হয়। কিন্তু ইসলামী ক্যালেন্ডার চন্দ্রমাসে হিসেব করে বছর গণনা করার কারণে ইসলামী ক্যালেন্ডারে অধিবর্ষ হিসেব করা হয়না।
লিখেছেন- মুহাম্মাদ মুহিব হাসান