বাস্তব সংখ্যা নিয়ে আমরা গণিতের জ্ঞাণ লাভ করার পর থেকেই কাজ করে থাকি। কিন্তু আমরা বাস্তব সংখ্যা নিয়ে ধারণা রাখি খুবই কম। অথচ শুধু অল্প কিছু ধারণা থাকলেই আমরা বাস্তব সংখ্যা কী এবং বাস্তব সংখ্যার প্রকারভেদ্গুলো মনে রাখতে পারব। আজকের আমাদের আলোচনায় রয়েছে বাস্তব সংখ্যার বিস্তারিত।
বাস্তব সংখ্যা বলতে আমরা কী বুঝি?- যে সকল সংখ্যাকে সংখ্যারেখা-র মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় তাদেরকে বাস্তব সংখ্যা বলে। সংক্ষেপে আমরা বলতে পারি- সকল মূলদ সংখ্যা এবং অমূলদ সংখ্যাকে বাস্তব সংখ্যা বলা হয়। যেমন- 1, 0, √3 ইত্যাদি। আর এর বিপরীতে আর এক ধরনের সংখ্যা আছে যাদের আমরা বলি অবাস্তব সংখ্যা।
আমরা এখন জানব বাস্তব সংখ্যার শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে-
স্বাভাবিক সংখ্যা (Natural Number): 1, 2, 3, 4 , … ইত্যাদি স্বাভাবিক সংখ্যা বা ধনাত্মক অখণ্ড সংখ্যা। এদের মধ্যে 2 , 3 , 5 , 7 , … ইত্যাদি সংখ্যাগুলো মৌলিক সংখ্যা এবং 4 , 6 , 8 , 9 , … ইত্যাদি যৌগিক সংখ্যা । এছাড়া আমরা মনে রাখতে পারি যে, দুইটি স্বাভাবিক সংখ্যার গ.সা.গু. 1 হলে আমরা তাদেরকে পরস্পরের সহমৌলিক সংখ্যা বলতে পারি। যেমন 6 ও 5 পরস্পরের সহমৌলিক ।
পূর্ণসংখ্যা (Integer): শূন্যসহ সকল ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অখণ্ড সংখ্যাকে পূর্ণসংখ্যা বলা হয় । অর্থাৎ -2, -1, 0, 1, 2, … ইত্যাদি পূর্ণসংখ্যা । পূর্ণসংখ্যাকেও আবার আমরা তিনভাগে ভাগ করতে পারি। যথা- ধনাত্মক, ঋণাত্মক ও অঋণাতক সংখ্যা।
ভগ্নাংশ সংখ্যা (Fractional Number): p/q আকারের কোনাে সংখ্যাকে আমরা সাধারণ ভগ্নাংশ সংখ্যা বা সংক্ষেপে ভগ্নাংশ বলি , এখানে লক্ষণীয় যে, q এর মান শূন্য বা এক হবেনা এবং q দ্বারা p নিঃশেষে বিভাজ্য হবেনা। যেমন 1/2, 3.2 ইত্যাদি। ভগ্নাংশেরও প্রকারভেদ রয়েছে। প্রকৃত ও প্রকৃত ভগ্নাংশ।
মূলদ সংখ্যা (Rational Number): p/q আকারের কোনাে সংখ্যাকে আমরা মূলদ সংখ্যা বলি। এক্ষেত্রে p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং q এর মান শূন্য নয়। যেমন- 2/1, 11/2 = 5.5 ইত্যাদি মূলদ সংখ্যা । যেকোনাে মূলদ সংখ্যাকে দুইটি সহমৌলিক সংখ্যার অনুপাত হিসাবেও লেখা যায় । সকল পূর্ণসংখ্যা ও ভগ্নাংশই মূলদ সংখ্যা ।
অমূলদ সংখ্যা (Irrational Number): যে সংখ্যাকে p/q আকারে প্রকাশ করা যায় না, যেখানে p ও q পূর্ণসংখ্যা এবং q এর মান শূন্য নয় , সে সংখ্যাকে অমূলদ সংখ্যা বলা হয়ে থাকে। পূর্ণবর্গ নয় এরূপ যে কোনাে স্বাভাবিক সংখ্যার বর্গমূল কিংবা তার ভগ্নাংশ একটি অমূলদ সংখ্যা । যেমন √2 = 1.414213… , √3= 1.732…ইত্যাদি অমূলদ সংখ্যা। কোনাে অমূলদ সংখ্যাকে দুইটি পূর্ণসংখ্যার অনুপাত হিসাবে প্রকাশ করা যায় না।
দশমিক ভগ্নাংশ সংখ্যা (Decimal Fractional Number): মূলদ সংখ্যা ও অমূলদ সংখ্যাকে দশমিক দিয়ে প্রকাশ করলে একে আমরা দশমিক ভগ্নাংশ বলি। যেমন 2.00, 6/4=1.333…
দশমিক বিন্দুর পর অঙ্ক সংখ্যা সসীম হলে, এদেরকে সসীম দশমিক ভগ্নাংশ এবং অঙ্ক সংখ্যা অসীম হলে, এদেরকে অসীম দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়ে থাকে। যেমন- 0.71 , 7.5152 ইত্যাদি সসীম দশমিক ভগ্নাংশ এবং 1.333.. , 2.123512367… , ইত্যাদি অসীম দশমিক ভগ্নাংশ। আবার, অসীম দশমিক ভগ্নাংশগুলাের মধ্যে দশমিক বিন্দুর পর কিছু অঙ্কের পূনরাবৃত্তি হলে, তাদেরকে অসীম আবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ এবং অঙ্কগুলাের পুনরাবৃত্তি না হলে এদের অসীম অনাবৃত্ত দশমিক ভগ্নাংশ বলা হয়ে থাকে।
আশা করি, বাস্তব সংখ্যা সম্পর্কে আপনাদের ধারণা স্পষ্ট হয়েছে।