ইমান ইসলামের সর্বোত্তম ও প্রধান স্তম্ভ। কারণ ঈমান অর্থই হলো বিশ্বাস স্থাপন। আল্লাহ, নবী রাসুলসহ আল্লাহর ঠিক করে দেয়া সবকিছুর উপর বিশ্বাস স্থাপন করার নামই ইমান। আর ইমানে মুফাসসাল এসব বিশ্বাসের ভীত আরও মজবুত করে। কারন, ইমানে মুফাসসালে অর্থ বিস্তারিত বিশ্বাস। এখানে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ৭টি বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা সম্পর্কে জেনে থাকি। আর এসব বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন আমাদের জন্য ফরজ।
ইমানে মুফাসসাল: امنت بالله وملئكته وكتبه ورسله واليوم الاخر والقدر خيره وشره من الله تعالى والبعث بعد الموت
বাংলা উচ্চারণ: আমানতু বিল্লাহি, ওয়া মালায়িকাতিহি, ওয়া কুতুবিহি, ওয়া রসূলিহি, ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি, ওয়াল কদরি খয়রিহি ওয়া শাররিহি মিনাল্লাহি তা’আলা, ওয়াল বা’ছি বা’দাল মাউত।
বাংলা অর্থ: আমি বিশ্বাস আনলাম আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসুলগণের প্রতি, কিয়ামত দিনের প্রতি, তাকদিরের প্রতি, আল্লাহর পক্ষ থেকে ভাগ্যের ভালো-মন্দ; মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি।’
ইমানে মুফাসসালে উল্লিখিত বিষয়গুলোর নাম লেখ।
—ইমানে মুফাসসালে ৭টি বিষয়ের উল্লেখ আছে। এগুলো হলো-
১। আল্লাহ তায়ালার উপর বিশ্বাস- সারা বিশ্বের সৃষ্টকর্তা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের জন্য সবার প্রথমেই জরুরী ও সবার প্রথম ফরজ।
২। ফেরেশতাদের উপর বিশ্বাস- আল্লাহর বিভিন্ন আদেশ পালনের জন্য রয়েছে ফেরেশতারা। তাঁদের উপর ইমান আনা আমাদের জন্য ফরজ। কতজন ফেরেশতা রয়েছেন, তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। তবে, গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য রয়েছেন চারজন প্রসিদ্ধ ফেরেশতা। তাঁদের নাম ও কাজ হলো-
হযরত জিবরাইল (আ): তিনি নবী-রাসুলগণের কাছে আল্লাহর ওহি নিয়ে আসতেন। ওহি মানে আল্লাহর বাণী।
হযরত মিকাইল (আ): তিনি জীবের জীবিকা বণ্টন ও মেঘবৃষ্টির দায়িত্বে নিয়োজিত।
হযরত আযরাইল (আ): তিনি আল্লাহর হুকুমে জীবের জান কবজ করেন।
হযরত ইসরাফিল (আ): তিনি শিঙ্গা হাতে আল্লাহর আদেশের অপেক্ষায় আছেন। তিনি প্রথম ফুঁ দেবেন, তাতে সকল সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ফুঁ দেবেন। তখন সবকিছু জীবন ফিরে পাবে।
৩। আসমানি কিতাবে বিশ্বাস- আসমানি কিতাব হলো মহান আল্লাহ তা’য়ালার মানব জাতির হেদায়াতের জন্য নাযিলকৃত বই। আসমানি কিতাব মোট ১০৪টি। কুরআন মজিদ সর্বশেষ আসমানি কিতাব। এটি মহান আল্লাহর বাণী। কুরআন মজিদের ভাষা আরবি। আমরা কোন কাজ কীভাবে করব তা কুরআন মজিদে বর্ণিত আছে।
৪। নবী-রাসুলে বিশ্বাস- সর্বপ্রথম নবী ও রাসূল হলেন হযরত আদম আ. এবং সর্বশেষ নবী হলেন হযরত মুহাম্মদ সা.। এই দুইজনের মাঝেও মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তাঁর বাণী পৌঁছে দিতে প্রেরণ করেছিলেন তাঁর পছন্দের মানুষদের। পবিত্র কুরআনে ২৫ জন নবী-রাসুলের নাম উল্লখ করা হলেও নবী-রাসুলের সংখ্যা এক লক্ষ চব্বিশ হাজার। তাঁদের মধ্যে রাসুল ৩১৩ জন।
৫। শেষ দিবসে বিশ্বাস- প্রতিটি সৃষ্টিকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর দুনিয়াতে মানুষ ও জীন জাতি যা করেছে তার বিচার করা হবে। একে বলা হয় শেষ দিবস বা কিয়ামত। আমাদের কিয়ামতে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
৬। তকদিরে বিশ্বাস- আমাদের জীবনে কী হবে, আমরা কখন মারা যাব, কী খাব- এসব সব কিছুই পূর্ব লিখিত। আর আমাদেরকে তাই আমাদের তকদিরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।
৭। মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস- মৃত্যুর পর সব কিছু শেষ হয়ে যাবেনা। মৃত্যুর পরের জীবন অনন্ত। মৃত্যুর পরের জীবনের শেষ নেই। মৃত্যুর পর আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে। আর এতে আমাদের বিশ্বাস আনতে হবে।