প্রাথমিক স্তর শেষ করে শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক স্তরে এসে গণিতের যে শাখার সাথে পরিচিত হয় তা হলো বীজগণিত। নতুন একটি জগতের মতো মনে হয় বীজগণিতকে। বিশাল এই গণিতের শাখা ধীরে ধীরে আমাদের পড়ালেখার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। তাই, ভয় না পেয়ে প্রথম থেকেই যদি আমরা বীজগণিতের সাথে নিজের তাল মিলিয়ে নিতে পারি, নিজের বেসিক ঠিক করে নিতে পারি, তাহলে বীজগণিত আমাদের কাছে হয়ে উঠবে খুবই সহজ।
বীজগণিত আসলে কী?- গাণিতিক চিহ্নগুলির অধ্যয়ন এবং এই চিহ্নগুলো নিপূণভাবে ব্যবহার করার নিয়মকে আমরা বীজগণিত বলি। তাই আজ আমরা চেষ্টা করব গাণিতিক চিহ্নসমূহ সহ বীজগণিত সম্পর্কে একটু জানার। বীজগণিতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার আগে প্রাথমিক ধারণা লাভ করার জন্য খুঁটিনাটি আমরা বোঝার চেষ্টা করব বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে।
পদ (Term): বীজগণিতে পৃথক পৃথক কোন সংখ্যা বা অক্ষর প্রতীককে পদ বলা হয়। যেমন: 1, 5, x, 4x, 5y ইত্যাদি।
রাশি (Expression): প্রক্রিয়া চিহ্ন ও সংখ্যাসূচক প্রতীকের অর্থবোধক সংযোগ বা বিন্যাসকে বীজগণিতীয় রাশি বলা হয়।
যেমন: 1+2x, 3a-2b, 4x + 5y – 2z ইত্যাদি।
মনে রাখতে হবে-
- পদ পৃথক হয় যোগ ও বিয়োগ চিহ্নের মাধ্যমে। যেমন: 3a-2b
- একাধিক পদের গুণফল ও ভাগফলও তাই একটি পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। 4x × 5y
- একই জাতীয় পদ মিলে রাশি গঠিত হলেও তাদের যোগফল ও বিয়োগফল একটি পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
যেমন: 4x + 3x = 7x
- প্রথম পদটির বামে কোন চিহ্ন না থাকলে সবসময় একে ধনাত্মক (Positive) ধরে নিতে হয়
প্রতীক (Symbol): যে সংখ্যা বা অক্ষর দ্বারা কোনো কিছুর পরিমাণ প্রকাশ করা হয় তাকে প্রতীক বলা হয়। বীজগণিতে দুই ধরনের প্রতীক রয়েছে।
১. সংখ্যা প্রতীক। যেমন: 1, 2, 3
২. অক্ষর প্রতীক: যেমন: x, y, z
চলক (Variable): যে কোন ধরনের অজ্ঞাত রাশি বা অক্ষর-প্রতীককে বীজগণিতীয় চলক বলা হয়।
- মনে রাখতে হবে-
- চলকের মান পরিবর্তনশীল।
- চলকের মান নির্দিষ্ট নয়।
- চলক অবশ্যই অক্ষর প্রতীক হবে।
- কোন রাশিতে একাধিক চলক থাকতে পারে।
সহগ (Co-efficient):
সাংখ্যিক সহগ: কোনো একপদী রাশিতে চলকের সাথে যখন কোনো সংখ্যা গুণক হিসেবে যুক্ত থাকে, তখন ঐ গুণককে রাশিটির সাংখ্যিক সহগ বলে। যেমন: 3x , 5y এদের সাংখ্যিক সহগ যথাক্রমে 3 ও 5।
একপদী রাশিতে চলকের সাথে যখন কোনো সংখ্যা গুণক হিসেবে যুক্ত থাকে না, তখন সাংখ্যিক সহগ 1 ধরতে হয়।
আক্ষরিক সহগ: যখন কোন চলকের সাথে কোন অক্ষর-প্রতীক গুণক হিসেবে যুক্ত থাকে, তখন ঐ গুণোককে রাশিটির আক্ষরিক সহগ বলে। যেমন: 3x , 5y এদের আক্ষরিক সহগ যথাক্রমে x ও y।
সূচক (Exponent): কোনো রাশিতে একই উৎপাদক যতবার গুণ আকারে থাকে, ততবারের সংখ্যাকে উৎপাদকটির সূচক বলা হয়। উৎপাদকটিকে সূচকের ভিত্তি বলা হয়।
যেমন: 16 = 2 × 2 × 2 × 2
= 24
এখানে, 2 হচ্ছে ভিত্তি এবং 4 হচ্ছে 2-এর সূচক।
মনে রাখতে হবে-
- সংখ্যার ক্ষেত্রে সূচক থেকে সূচকমুক্ত ফলাফল পাওয়া যায়।
যেমন: 23 + 32
= 8 + 9
= 17
- অক্ষরের ক্ষেত্রে সূচক থেকে ফলাফল সূচক আকারে থেকে যায়।
যেমন: a3 + 24
= a3 + 24
কোনো সংখ্যার ঘাত বা শক্তি 1 হলে, সংখ্যাটির সূচক 1 লেখা হয় না। যেমন: a = a1
সূচকের ক্ষেত্রে-
- গুণের ক্ষেত্রে সূচকে-সূচকে যোগ হয়। যেমন: a5 . a4 = a9
- ভাগের ক্ষেত্রে সূচকে-সূচকে বিয়োগ হয়।যেমন: a6 ÷ a4 = a2
- সংখ্যা ও অক্ষর মিশ্রিত পদের ক্ষেত্রে সংখ্যাগুলো আলাদা গুণ করে একই জাতীয় অক্ষরগুলোর সূচকের যোগ করতে হয়।
যেমন: 5a5 . 2a4 = 10a9
- সংখ্যা ও অক্ষর মিশ্রিত পদের ক্ষেত্রে সংখ্যাগুলো আলাদা ভাগ করে একই জাতীয় অক্ষরগুলোর সূচকের বিয়োগ করতে হয়।
যেমন: 15a5 ÷ 3a4 = 5a
ভিত্তি অবশ্যই একই হতে হবে।
বীজগণিতীয় যোগ:
- প্রথমে দুই বা ততোধিক বীজগণিতীয় রাশি যোগ করতে হলে সদৃশ পদের সহগগুলো চিহ্নযুক্ত সংখ্যার নিয়মে যোগ করতে হয়।
- এরপর প্রাপ্ত সহগের ডানপাশে প্রতীকগুলো বসাতে হয়।
- বিসদৃশ পদগুলো তাদের চিহ্নসহ অপরিবর্তিত থেকে বসে যায়।
- কোনো রাশির আগে কোনো চিহ্ন না থাকলে, সেখানে যোগ (+) চিহ্ন ধরতে হয়।
বীজগণিতীয় বিয়োগ:
- একটি বীজগণিতীয় রাশি থেকে অপর একটি বীজগণিতীয় রাশি বিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রথম রাশি থেকে দ্বিতীয় রাশির যোগাত্মক বিপরীত রাশি যোগ করা হয়।
অর্থাৎ, বিয়োজ্য বা দ্বিতীয় রাশির প্রতিটি পদের চিহ্ন পরিবর্তন করে প্রাপ্ত রাশিকে প্রথম রাশির সাথে যোগ করা হয়।
যেমন: 5a+4b-5c থেকে 3a-4b-6c বিয়োগ করতে হলে প্রথমে দ্বিতীয় রাশির পদ্গুলোর চিহ্ন পরিবর্তন করে প্রথম রাশির সাথে যোগ করতে হবে।
অথবা,
সমীকরণ(Equation): অজানা বা অজ্ঞাত রাশি বা চলক, প্রক্রিয়া চিহ্ন এবং সমান চিহ্ন সংবলিত গাণিতিক বাক্যকে সমীকরণ বলা হয়।
যেমন: 3x+5 = 2y-6, 5x-9 = 1 এক ঘাত বিশিষ্ট সমীকরণ। প্রথম সমীকরণটি দুই চলক ও দ্বিতীয় সমীকরণটি এক চলকবিশিষ্ট।
- মনে রাখতে হবে-
- একটি সমীকরণে অবশ্যই দুইটি পক্ষ থাকে।
- সমান চিহ্ন দেখে সমীকরণ বোঝা যায়।
- সমান (=) চিহ্নের বাম পাশের রাশিকে বামপক্ষ ও ডানপাশের রাশিকে ডানপক্ষ বলা হয়।
- একটি সমীকরণ থেকে চলকের মান নির্ণয় করার প্রক্রিয়াকে সমীকরণের সমাধান বলে।
- সমীকরণের সমাধানে দুইটি সমান (=) চিহ্ন ব্যবহার করা যায় না।
- সমাধানে ‘বা’ ব্যবহার করতে হয়।
- চলকের মানকে সমীকরণের মূল বলা হয়।
- চলকের মান দ্বারা সমীকরণের দুই পক্ষ সমান হয়।
- চলককে সাধারণত বামপক্ষে রেখে সমাধান করা হয়।
- চলকবর্জিত পদগুলোকে পক্ষান্তর করে করে সমাধান করতে হয়।
- সমীকরণে একাধিক চলক থাকতে পারে।
- সমীকরণে চলকের ঘাত একাধিক হতে পারে।
সমীকরণ সমাধানে-
- পরস্পর সমান রাশির দুই পক্ষে একই রাশি যোগ করলে যোগফলগুলো পরস্পর সমান থাকে।
যেমন: a = b হলে, a + d = b + d [উভয় পক্ষে d যোগ করা হয়েছে]
- পরস্পর সমান রাশির দুই পক্ষে একই রাশি বিয়োগ করলে বিয়োগফলগুলো পরস্পর সমান থাকে।
যেমন: a = b হলে, a – d = b – d [উভয় পক্ষে d বিয়োগ করা হয়েছে]
- পরস্পর সমান রাশির দুই পক্ষের প্রত্যেক রাশিকে একই রাশি দ্বারা গুণ করলে গুণফলগুলো পরস্পর সমান থাকে।
যেমন: a = b হলে, ad = bd [উভয় পক্ষ d দ্বারা গুণ করা হয়েছে]
- পরস্পর সমান রাশির দুই পক্ষের প্রত্যেক রাশিকে অশূন্য একই রাশি দ্বারা ভাগ করলে গুভাগফলগুলো পরস্পর সমান থাকে।
যেমন: a = b হলে, = [উভয় পক্ষ d দ্বারা ভাগ করা হয়েছে যেখানে d≠0]