সংখ্যার ব্যবহার সর্বত্র। ছোটবেলায় ১, ২ গুনতে শেখা থেকে শুরু করে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব প্রমাণ সকল ক্ষেত্রে সংখ্যার ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞান ও গণিতশাস্ত্র যেমন একে অন্যের সঙ্গে জড়িত ঠিক তেমনিভাবে বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে সংখ্যার ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজ আমরা এই আর্টিকেলে সংখ্যা বিষয়ক বিভিন্ন মজার তথ্য জানবো এবং কিছু সহজ সংজ্ঞার মাধ্যমে আমরা সংখ্যার ব্যাপারে অনেক কিছু জানবো।
সংখ্যার ইতিহাস
সৃষ্টির শুরু থেকে পরিমাপ ও গণনা করার জন্য সংখ্যার ব্যবহার হয়ে আসছে। বিভিন্ন সময় সংখ্যাকে প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন সভ্যতা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে গেছে। বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মতে গুহাবাসীরা প্রাচীনকালে বিভিন্ন শিকারের হিসাব রাখার জন্য গুহার দেয়ালে দাগ কেটে রাখতেন। এই দাগগুলো মূলত শিকারের সংখ্যা গণনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো।
বিভিন্ন সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে সংখ্যার বিকাশও ঘটতে থাকে। যেমন, মিশরীয়দের সংখ্যার জ্ঞান প্রাচীনকালেও বেশ ভালই ছিল। তবে সেখানে ছিলনা শূন্যের ব্যবহার বরং দশের বিভিন্ন গুণিতক এর জন্য ছিল আলাদা আলাদা প্রতীক। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশু পাখির আকৃতি দ্বারাও সংখ্যাকে বুঝাতেন। এছাড়াও বিভিন্ন চিহ্নের ব্যবহার সংখ্যা বোঝানোর ক্ষেত্রে তারাই প্রথম দিকে ব্যবহার করা শুরু করেন।
মিশরীয়রা যেমন ১০ এর গুণিতক ব্যবহার করত ঠিক তেমনিভাবে ব্যাবিলনীয়রা তাদের সংখ্যা পদ্ধতিতে ৬০ এর গুণিতক ব্যবহার করত। এ কারণে প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সংখ্যা পদ্ধতি ষাটমূলক সংখ্যা পদ্ধতি নামেও পরিচিত। ব্যাবিলনের আরও ৩০০০-৩৫০০ বছর পরে ভারতবর্ষে দশমিক অঙ্কপাতন পদ্ধতিতে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করি, সেটা আবিষ্কৃত হয় তথা শূন্যের ব্যবহার শুরু হয়।
ব্যাবিলন ও মিশরের মতো গ্রীক ও রোমানরাও শুন্যের ব্যবহার জানত না। গ্রীকরা সংখ্যার জন্য গ্রীক বর্ণমালার অক্ষরের সাহায্যে তারা সংখ্যা প্রকাশ করত। আজও গ্রীক পদ্ধতি আমরা সংখ্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকি আর রোমান সংখ্যায় আমরা যে সংখ্যাগুলো লিখি সেগুলো তারই উদাহরণ।
প্রাচীন ভারতীয় এবং আরবদের সম্মিলিত অবদানের ফলে আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে যে সংখ্যা লিখি তা পাই। প্রায় ৬০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে আহুন্য (শূন্য বুঝায়) থেকে নয় পর্যন্ত মোট দশটি প্রতীক ব্যবহার করে যেকোনো সংখ্যা লিখতে পারার বর্তমান পদ্ধতিটি আবিষ্কার করে। মূলত এই পদ্ধতিটি ধীরে ধীরে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এবং বর্তমানে আমরা পৃথিবীতে এই পদ্ধতিতেকে সবথেকে বেশি পরিমাণে ব্যবহার করে থাকি। এই পদ্ধতি আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার আরো তাড়াতাড়ি হওয়া শুরু করেছে। মূলত শূন্যের ব্যবহার ছাড়া এত জটিল এবং কঠিন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হতো না! যার কারণে হয়তোবা জ্ঞান-বিজ্ঞানের এতটা প্রসার সম্ভব হতো না ফলে প্রযুক্তির এতটা ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে হয়ত সম্ভব হতো না।
সংখ্যা কাকে বলে
সংখ্যা হচ্ছে একটি গাণিতিক বিষয় যা দ্বারা কোন কিছু গণনা পরিমাপ অথবা আখ্যা দেওয়া যায়। অর্থাৎ আমরা কোন কিছু পরিমাপ করতে গেলে অথবা গণনা করতে গেলে গণিতের যে বিষয়কে ব্যবহার করে থাকি তাই হচ্ছে সংখ্যা। সংখ্যাকে প্রকাশ করার জন্য যে চিহ্নগুলো বা প্রতীকগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাদেরকে বলা হয়ে থাকে অংক। সংখ্যার উদাহরণ হিসেবে আমরা ১, ২, ৩, 1, 2, 3, i, ii, iii এর মত আরো অনেকের উদাহরন দিতে পারি।
সংখ্যার প্রকারভেদ
সংখ্যা মূলত দুই প্রকার। এইগুলো হচ্ছে:
১) বাস্তব সংখ্যা
২) অবাস্তব সংখ্যা
বাস্তব সংখ্যা কাকে বলে
যে সকল সংখ্যাকে সংখ্যারেখার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় তাদেরকে বাস্তব সংখ্যা বলা হয়ে থাকে। বাস্তব সংখ্যা ধনাত্মক (+) ও ঋণাত্মক (-) উভয়ই হতে পারে এছাড়া শুন্য (০) একটি বাস্তব সংখ্যা। অর্থাৎ যা কিছুকে আমরা গণনা করতে পারি বা সংখ্যারেখার মাধ্যমে দেখাতে পারি তাই বাস্তব সংখ্যা। বাস্তব সংখ্যার কিছু উদাহরণ হতে পারে ১, ২, ৩, -৫, -4, -6, 0 ইত্যাদি।
বাস্তব সংখ্যার প্রকারভেদ
বাস্তব সংখ্যা দুই প্রকার। এগুলো হচ্ছে:
১) মূলদ সংখ্যা
২) অমূলদ সংখ্যা
মূলদ সংখ্যা কাকে বলে
যে সকল সংখ্যাকে দুইটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত রূপে (শূন্য দিয়ে ভাগ করা ছাড়া) প্রকাশ করা যায় তাদের মূলদ সংখ্যা বলে। 0.5 একটি মূলদ সংখ্যা কেননা একে আমরা দুটো সংখ্যার অনুপাত রূপে প্রকাশ করতে পারি অর্থাৎ 1/2 আবার অপরদিকে 5 একটি মূলদ সংখ্যা কেননা এটাকে আমরা দুটো সংখ্যার অনুপাত 5/1 রূপে প্রকাশ করতে পারি। অর্থাৎ সব পূর্ণসংখ্যাই মূলদ সংখ্যা।
অমূলদ সংখ্যা কাকে বলে
যে সকল বাস্তব সংখ্যাকে দুটো পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত রূপে প্রকাশ করা যায় না তাদেরকে অমূলদ সংখ্যা বলা হয়ে থাকে। √3 একটি অমূলদ সংখ্যা কেননা এটিকে দুটো পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত রূপে প্রকাশ করা যায় না। অথচ একইভাবে ১০ একটি মূলদ সংখ্যা কেননা এটাকে আমরা দুটো পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত রূপে প্রকাশ করতে পারি।
অবাস্তব সংখ্যা কাকে বলে
ঋণাত্মক সংখ্যার বর্গমূলকে অবাস্তব সংখ্যা বলে। অবাস্তব সংখ্যার একক i দ্বারা সূচিত হয়। i এর বর্গ -1 ধরা হয়। একটি বাস্তব সংখ্যার সঙ্গে i গুন করে মূলত অবাস্তব সংখ্যাকে প্রকাশ করা হয়। বাস্তব জগতে এই সংখ্যার ব্যবহার করা হয় না বা অস্তিত্ব নেই এজন্য একে অবাস্তব সংখ্যা বলা হয় বা ইংরেজিতে যাকে Imaginary Number বলা হয়।
মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে
যে সকল সংখ্যা ১ এবং ঐ সংখ্যা ব্যতীত অন্য কোন সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হয়না তাদেরকে মৌলিক সংখ্যা বলে। ৩ একটি মৌলিক সংখ্যা কেননা এই সংখ্যাকে ১ এবং ৩ নিজে ছাড়া অন্য কোন সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য করা যায় না এজন্য ৩ কে একটি মৌলিক সংখ্যা বলা হয়।
যে সকল সংখ্যা মৌলিক সংখ্যা নয় সেসকল সংখ্যাকে যৌগিক সংখ্যা বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে সকল সংখ্যাকে ১ এবং ঐ সংখ্যা ছাড়াও অন্য সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে ভাগ করা যায় তাদেরকে যৌগিক সংখ্যা বলে। যেমন ৬ একটি যৌগিক সংখ্যা কেননা ৬ কে ৩, ২ দ্বারা নিঃশেষে ভাগ করা যায়।
সংখ্যার গুরুত্ব
গণনা থেকে বিজ্ঞান বিষয়ক সকল ক্ষেত্রে সংখ্যার গুরুত্ব অনেক। আমরা বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করতে যেমন সংখ্যাকে ব্যবহার করি ঠিক তেমনি ভাবে এটি দ্বারা আমাদের সমাজের অনেক নিয়ম কানুন গঠন করা হয়। যেমন সংখ্যা দ্বারা নির্দেশ করা হয় বিভিন্ন অনুচ্ছেদ, পৃষ্ঠাসংখ্যা অপরদিকে সংখ্যা দ্বারা হিসাব করা হয়ে থাকে একটি জিনিস তৈরি করতে ঠিক কতটুকু অন্যান্য জিনিসের প্রয়োজন হবে। সংখ্যা বিষয়ক সঠিক জ্ঞান আমাদেরকে আরও দক্ষ করে তোলে বিভিন্ন কাজে।
এই ছিল সংখ্যা বিষয়ক আমাদের এই আর্টিকেলটি। জানার আগ্রহ মানুষকে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে সাহায্য করে। এবং জানার আগ্রহ থেকেই মানবজাতি আজ এতটা উন্নতি করতে পেরেছে। জ্ঞান অর্জন করার জন্য যেখানে জ্ঞান রয়েছে সেসকল স্থানে বিচরণ করতে হয়। আর আপনি যদি জ্ঞানার্জনে আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইটটিতে ঘুরে দেখতে পারেন। এখানে এরকম তথ্যবহুল আরো অনেক লেখা পাবেন যেগুলো আপনার মস্তিষ্কের তথ্য-ভান্ডারকে আরো পরিপূর্ণ করে তুলবে।