গণিতশাস্ত্রে যোগ-বিয়োগ অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটো টপিক। আমরা অনেকে হয়তো ভাবতে পারি যোগ এবং বিয়োগ এর মাধ্যমে শুধুমাত্র ছোটখাটো কিছু কাজই হয়তোবা করা হয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গণিত এবং বিজ্ঞান শাস্ত্রে এই দুটো চিহ্ন এবং এদের কাজের গুরুত্ব অনেক! আজকের এই আর্টিকেলের আমরা যোগ-বিয়োগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব, সঙ্গে জানবো এদের উৎপত্তি এবং মজার কিছু ফ্যাক্ট।
যোগ
একাধিক সংখ্যাকে একত্রে গণনা করার জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাই হচ্ছে যোগ চিহ্ন বা যাকে ইংরেজিতে বলা হয়ে থাকে Plus Symbol (প্লাস চিহ্ন)। যোগ শব্দের আগমন ল্যাটিন শব্দ Plus থেকে, যার অর্থ ‘আরও’। আমরা এটাকে সহজ বাক্যের রূপে দেখাই তবে জিনিসটা এমন দাঁড়াবে, ধরুন আমার কাছে ৪টি জিনিস রয়েছে এবং তার সঙ্গে আমি আরও ৫টি জিনিস একত্রিত করছি ফলে আমার কাছে ৯ টি জিনিস হল। অর্থাৎ এখানে আরো কিছু জিনিস যুক্ত করা হলে যোগের কাজ হচ্ছে। এইজন্য ল্যাটিন শব্দ Plus দ্বারা আর কিছুকে বোঝানো হতো।
যোগ চিহ্নের ব্যবহার যেভাবে শুরু হয়
যোগের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসলেও এই চিহ্নের ব্যবহার আরো পরে শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে চিহ্নটি প্রথম ব্যবহৃত হয় Nicole Oresme নামক একজন ফরাসি দার্শনিক দ্বারা। তিনি তার ‘Algorismus proportionum’ বইয়ে প্রথমবার ‘+’ চিহ্নের ব্যবহার করেন।
প্রকৃতপক্ষে সেই চিহ্নকে তখনই বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হতে দেখা যায়নি। অনেক বিজ্ঞানী ও গণিতশাস্ত্র নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা নিজেদের মতন চিহ্ন ব্যবহার করতেন। অনেকে বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহৃত অক্ষরকে যোগ চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করতেন আবার অনেকে নিজেদের মতো করে তৈরি করা চিহ্ন ব্যবহার করতেন।
প্রকৃতপক্ষে তখনও কোন সর্বজন স্বীকৃত চিহ্ন যোগ চিহ্ন হিসাবে ব্যাবহার করা হতো না। ‘+’ চিহ্নের প্রচলন ব্যপকভাবে ঘটে একজন জার্মান গণিতবিদ Johannes Widmann এর দ্বারা। Johannes Widmann তার ‘Mercantile Arithmetic or Behende und hüpsche Rechenung auff allen Kauffmanschaff’’ বইতে ‘+’ চিহ্নের ব্যাবহার করেন।
এরপর থেকে মূলত আরো অনেকে এই চিহ্নটি ব্যবহার করা শুরু করেন এবং একপর্যায়ে এই চিহ্নটি কে অধিকাংশ মূল ধারার বিজ্ঞানীরা এবং গণিতবিদরা ব্যবহার করা শুরু করেন। যার কারণে শেষ পর্যন্ত এই চিহ্নটি যোগ করার ক্ষেত্রে সর্বজনস্বীকৃত একটি চিহ্নতে পরিণত হয়।
বিয়োগ
কোন সংখ্যা থেকে কোন সংখ্যা বাদ দেওয়ার জন্য যা ব্যবহার করা হয় তাকে বলা হয় বিয়োগ। কোন সংখ্যার হ্রাস বুঝানোর জন্য যে চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাই মূলত বিয়োগ চিহ্ন (-) বা ইংরেজিতে যাকে বলে Minus Symbol (Minus চিহ্ন)। ‘minus’ একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ হচ্ছে ‘less’ তথা কম বা স্বল্প। এই বিষয়টাকে যদি আমরা একটি বাক্যের সাহায্যে বুঝাই তবে সেটা দাঁড়াবে এমন যে ধরুন আমার কাছে ৪ টি জিনিস রয়েছে এবং সেখান থেকে ২ টি জিনিস কমে আর অবশিষ্ট থাকে ২ টি অর্থাৎ এখানে হ্রাস হচ্ছে তথা বিয়োগ বুঝানো হচ্ছে।
বিয়োগ চিহ্নের ব্যবহার যেভাবে শুরু হয়
প্রকৃতপক্ষে বিয়োগ চিহ্নের উদ্ভব সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায়নি। খুব সম্ভবত চতুর্দশ শতাব্দীতেই যোগের সাথে বিয়োগেরও উৎপত্তি ঘটে। ‘+’ চিহ্নের মত ‘-‘ চিহ্নেরও প্রচলন ব্যপকভাবে ঘটে জার্মান গণিতবিদ Johannes Widmann এর দ্বারা।
Johannes Widmann তার ‘Mercantile Arithmetic or Behende und hüpsche Rechenung auff allen Kauffmanschaff’’ বইতে ‘-’ চিহ্নের ব্যাবহার করেন। এরপর থেকে মূলত আরো অনেকে এই চিহ্নটি ব্যবহার করা শুরু করেন এবং একপর্যায়ে এই ‘-’ চিহ্নটিকে অধিকাংশ মূল ধারার বিজ্ঞানীরা এবং গণিতবিদরা ব্যবহার করা শুরু করেন।
Johannes Widmann তার বইয়ে ‘+’ ও ‘-’ চিহ্নটিকে এভাবে উত্থাপন করেন:
“was − ist, das ist minus, und das + ist das mer”
উপরোক্ত উক্তিটি মূলত জার্মান ভাষায়। এখানে ‘mer’ শব্দ দ্বারা বোঝানো হয়েছে মর্ডান জার্মান শব্দ ‘mehr’ কে যার অর্থ হচ্ছে ‘more’ বা আরও আর ‘minus’ দিয়ে তিনি কম বুঝিয়েছেন। মূলত তার বইয়ের এই বাক্য দ্বারা আধুনিক বিজ্ঞান এবং গণিতশাস্ত্র চর্চার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় এবং আমরা দুটো চিহ্নকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা শুরু করি এবং চিহ্ন দুটো সর্বজন স্বীকৃত হতে থাকে।
যোগের বিয়োগের ব্যবহার
দৈনন্দিন জীবনে যেমন আমাদের যোগ বিয়োগ করতে হয় বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ রাখার জন্য ঠিক তেমনি ভাবে বৈজ্ঞানিক কার্যকলাপের ক্ষেত্রও এর গুরুত্ব অপরিসীম। মূলত যেকোনো ধরনের গণিতের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার সর্বদা হয়ে থাকে। অজানা চলক এর মান নির্ণয় থেকে শুরু করে কোন মৌলের ভর নির্ণয় সবক্ষেত্রে যোগ এবং বিয়োগ এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত গণিত ও বিজ্ঞান শাস্ত্রের ভিত্তিস্বরূপ যেসকল বিষয় রয়েছে তার মধ্যে যোগ এবং বিয়োগ অন্যতম প্রধান ভিত্তি। শিশুদের গণিত শেখানোর জন্য সর্বপ্রথম সংখ্যা শেখানো হয় এবং সংখ্যা শেখানোর পরে যোগ বিয়োগ শেখানোর মাধ্যমে গণিতের মূল বিষয় সম্পর্কে তাদের ধারণা দেয়া হয়। অর্থাৎ এ থেকে বোঝা যায় গণিত শাস্ত্রের ভিত্তিতে রয়েছে যোগ এবং বিয়োগ এর ব্যবহার।
গণিতশাস্ত্রে দক্ষ হতে গেলে যেমন আমাদের যোগ-বিয়োগ আগে জানতে হবে ঠিক তেমনি ভাবে সফলতা লাভের জন্য জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই। জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আমরা আমাদের পারিপাশ্বিক যেমন বদলাতে পারে ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের নিজেদেরকে উন্নত করে তুলতে পারি। আমাদের এই ওয়েবসাইটটি আপনাদের জন্য হতে পারে জ্ঞান অর্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম। এখানে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন তথ্যবহুল লেখা প্রকাশ করে থাকি যেগুলো আপনার জ্ঞানের ভান্ডারকে আরো পরিপূর্ণ করে তুলবে।
লিখেছেন- সাকিব মাহমুদ