আল্লাহ মানুষ ও জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহর ইবাদতের জন্য। ইবাদতের জন্য পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। পবিত্রতা অর্জনের প্রকৃত মাধ্যম হলো পানি। কিন্তু এমন অনেক সময় আসতে পারে বা আমরা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারি যখন আমাদের পক্ষে পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তখন আমাদেরকে তায়াম্মুম করতে হয়। তায়াম্মুম কী, তায়াম্মুম কখন করতে হয় ও কীভাবে করতে হয় আজকে আমরা জানার চেষ্টা করব।
তায়াম্মুম শব্দটি আরবি। বাংলায় এর অর্থ ইচ্ছা করা। পবিত্র মাটি বা মাটি জাতীয় পবিত্র বস্তু দ্বারা পবিত্র হওয়ার নিয়তে মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করাকে তায়াম্মুম বলা হয়। তায়াম্মুম মূলত করা যাবে ওযু ও গোসলের পরিবর্তে।
তায়াম্মুম কখন করা যাবে-
- যদি পানি পাওয়া না যায়।
- পানি পাওয়া গেলেও যদি যেখানে পানি পাওয়া যাবে সেখানে ভয়ংকর প্রাণী কিংবা শত্রুর আক্রমণের আশংকা থাকে।
- পানি ব্যবহারে ক্ষতির আশংকা থাকলে। যেমন-
- অসুস্থ ব্যক্তি পানি ব্যবহারে অসুস্থতা বেড়ে গেলে।
- প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় পানি গরম করে ব্যবহার করতে না পারলে শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে।
- নিজের সাথে অল্প পরিমাণ পানি থাকলে এবং উৎস থেকে অনেক দূরে অবস্থান করলে।
- যানবাহনে থাকা অবস্থায় পানি পাওয়া না গেলে অথবা পানি আনতে গেলে গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার ভয় থাকলে।
তায়াম্মুম যা যা দিয়ে করা বৈধ-
তায়াম্মুমের জন্য প্রয়োজন পবিত্র মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তু। যেমন- শুকনা মাটি, বালু, ধুলা, কঙ্কর, পাথর। এক্ষেত্রে আরও কিছু বস্তু যেমন কাঠ, লোহা, পিতল বা কাপড়ে যদি ধুলা-বালি জমে এবং এতে হাত মারলে হাতে ধুলা লাগে, তবে এসব বস্তু দিয়েও তায়াম্মুম করা যাবে।
তায়াম্মুমের ফরজ কতটি ও কী কী-
তায়াম্মুমের ফরজ তিনটি।
- নিয়ত করা
- সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করা
- উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করা
তায়াম্মুমের সুন্নত-
- বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম শুরু করা।
- উভয় হাতের তালু মাটিতে রাখার পর একবার সামনে ও পেছনে টানা।
- মাটিতে হাত রাখার সময় আঙুল কিছুটা ফাঁকা রাখা।
- মাটি থেকে হাত উঠানোর সময় হাত ঝেড়ে নেয়া।
- প্রথমে মুখ ও পরবর্তীতে উভয় হাত মাসেহ করা।
- মুখ ও হাত মাসেহ করার মধ্যবর্তী সময়ে দেরি না করা।
তাহলে আমরা তায়াম্মুম কীভাবে করব-
মাটিতে একবার উভয় হাত মারবে। এরপর ধুলা হালকা করার জন্য দুই হাতে ফুঁ-দেবে। এরপর দুই হাত দিয়ে চেহারা মাসেহ করতে হবে।
এরপর আবার মাটিতে দু’হাত মারতে হবে। ধুলা হালকা করার জন্য দুইহাতে আবারও ফুঁ-দিতে হবে। এরপর বাম হাত ডান হাতের উপরের অংশে কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে অর্থাৎ বুলিয়ে নিতে হবে । এবং কনুই থেকে নিচের অংশে কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করতে হবে। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ডান হাত দিয়ে বাম হাত মাসেহ করতে হবে।
তায়াম্মুম কখন করা যাবে না এবং নষ্ট/বাতিল হয়ে যাবে-
- পানির উৎস পাওয়া গেলে।
- পানি ব্যবহারে কোনো সমস্যা না থাকলে। অর্থাৎ যেসব সমস্যার কারণে তায়াম্মুম করা জায়েজ সেগুলোর সমাধান হলে।
- ওযু ভাঙার কারণগুলো ঘটলে। যেমন- বায়ু নির্গত হলে।
- গোসল ফরজ হওয়ার কারণগুলো ঘটলে। যেমন- স্বপ্নদোষ হলে।